সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: কেউ যদি আপনার আইনগত পরিচয় অস্বীকার করে এবং আপনার সম্পত্তিতে স্বত্বের অধিকার অস্বীকার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আপনি দেওয়ানী আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারবেন। ধরুণ আপনাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, বেআইনী বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে ‘চাকুরীতে থাকা আপনার আইনগত অধিকার’ বিষয়ে অঅপনি ঘোষনামূলক মামলা দায়ের করতে পারেন। ধরুণ, রহিম মিয়াকে এস.এস.সি পরীক্ষার হল থেকে বেআইনী উপায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে । এক্ষেত্রে রহিম মিয়া এস.এস.সি পাশ করেছে মর্মে ঘোষণা দেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের, স্পেসিফিক রিলিফ এ্যাক্ট এর ৪২ ধারা অনুসারে মামলা দায়ের করতে পারবে।
জমিতে যার স্বত্ব আছে সে বিনা বাধায় তার জমি ভোগ দখল করার অধিকারী। কেউ সে অধিকারে বাধা সৃষ্টি করলে আপনি দেওয়ানী আদালতে আদালতে মামলা করে অধিকার সম্পর্কে ঘোষণা পেতে পারেন। ধরুণ আপনি এক বিঘা জমির মালিক। দীর্ঘদিন এই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। হঠাৎ আপনার প্রতিবেশী লুৎফর রহমান ওই জমিতে আপনার স্বত্ব অস্বীকার করে জমি দখলের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে আপনি সহজেই লুৎফরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী ওই জমিতে আপনার স্বত্ব আছে এই মর্মে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে পারবেন। এ রকম হাজারো অন্যায় কাজের প্রতিকার ঘোষণামূলক মামলা করে আপনি প্রতিকার পেতে পারেন।
এবার আমরা জানব ঘোষণামূলক মোকদ্দমা বা স্বত্বের মামলা কেন করবেন। আপনার আইনগত পরিচয় রক্ষার জন্য, বেআইনী কাজকে বাতিল করার জন্য, আপনার আইনগত অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য, সম্পত্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করার জন্য, আপনার স্বত্ত্বাকে বহাল রাখার জন্য। তবে মনে রাখবেন ঘোষণামূলক মামলা বা স্বত্বের মামলা মঞ্জুর করা কিংবা না করা সম্পূর্ণ আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। আদালত তার সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা ব্যবহার করে কোন বিষয় ঘোষণা প্রদান করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন আদালত কিন্তু এই ক্ষমতা তার নিজের খেয়াল খুশিমত প্রয়োগ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে আদালতকে কিছু নীতি মেনে চলতে হয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী আদালতের সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা, যুক্তিযুক্ত এবং বিচার কার্যাবলীর মূলনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। আরেকটি বিষয় বলে রাখার দরকার। আপনি মূল প্রতিকারের পাশাপশি অন্যান্য যে প্রতিকার বা ঘোষণা চাইতে পারেন সেটা হচ্ছে আনুষাঙ্গিক প্রতিকার। যেমন আপনার সম্পত্তিতে স্বত্ব আছে এই মর্মে ঘোষণামূলক মোকদ্দমার সাথে আপনি দখল উদ্ধারের প্রার্থনাও করতে পারবেন। সেটাই হচ্ছে আনুষাঙ্গিক প্রতিকার।
মনে রাখবেন সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় স্বত্বের মামলায় আনুষঙ্গিক প্রতিকার প্রার্থনা করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আপনার ট্রেডমার্ক নিরঙ্কুশভাবে ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। কেউ ট্রেডমার্ক ব্যবহারে হস্তক্ষেপ করলে, তা আপনার আইনগত অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হবে। আপনি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুসারে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে পারবেন। কোন প্রকার বিভক্তি ছাড়া কোন মসজিদে নামাজ আদায় করা মুসলমানদের আইনগত অধিকার। মসজিদের কাছে কেউ বাজনা বাজালে তা এই অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে। ইহা হতে লোকজনকে বিরত রাখার জন্য ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যাবে।
সাধারণত ঘোষণামূলক মামলা ৬ বছরের মধ্যে দায়ের করতে হয়। তামাদি আইনের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ঘোষণামূলক মামলার প্রকৃত কারণ উদ্ভব হওয়ার সময় হতে ৬ বছরের মধ্যে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হবে। সাধারণত ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হলে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা কোর্ট ফি দিতে হবে। কিন্তু আনুষঙ্গিক প্রতিকারসহ ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হলে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮